এইচ অার রুবেল হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
শায়েস্তাগঞ্জে বৃদ্ধ পিতার সকল সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন ছেলে। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর গত সাত বছর থেকে দায়িত্বে অবহেলা করায় বৃদ্ধ পিতা রজব আলী (৭৫) প্রতিকার চেয়ে এলাকার গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে সম্পত্তি ফিরে পেতে অবশেষে হবিগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ছেলে ও ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ১১ নং ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের ভাটি শৈলজুড়া (রাবনডুবি) গ্রামে।
সূত্রে জানা গেছে, ৭৫ বছর বয়সী রজব আলীর তিন ছেলে, পাঁচ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসারই ছিল। শাহজীবাজার পল্লী বিদ্যুতে চাকির করতে তিনি। বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। বড় সংসার হলেও তেমন আয় করতে পারেননি তিনি। পাঁচ মেয়ে ও ও দুই ছেলেকে বিবাহ দিতে সব টাকা খরচ হলেও অবশিষ্ট ভিটে বাড়িটিই তাকে তার সন্তানদের জন্য। স্ত্রী আবেদা খাতুন মারা গেলে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে রজব আলী। ছোট ছেলে বাচ্চু মিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেলে বড় ছেলে কদ্দুছ মিয়াকে নিয়েই থাকতেন তিনি। কিন্তু বড় ছেলের বউ সামছুন্নাহার ঠিকমত দেখাশুনা না করায় সকলের পরামর্শে দ্বিতীয় বিবাহ করেন রজব আলী। আর এ দ্বিতীয় বিবাহ যেনই কাল হয়ে দাড়ায় রজব আলীর জীবনে। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে বড় ছেলে কুদ্দুছ মিয়া ও তার স্ত্রী সামছুন্নাহার। ২০১৩ সালে রজব আলী অসুস্থ হলে কদ্দুছ মিয়া ও তার স্ত্রী বুঝিয়ে ফুসলিয়ে রজব আলীর কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ৫২ শতাংশ জমি হেবা দলিল করে নেয় বড় ছেলে ও তার স্ত্রী। এরপর বাড়ি থেকে তাড়াতে শুরু হয় বয়স্ক পিতার উপর নির্যাতন। দেয়া হয় মানসিক চাপ। একসময় কদ্দুছ মিয়া বলেন এই জমি আমি ক্রয় করেছি। রজব আলী তখন সাব রেজিস্ট্র অফিস থেকে দলিল তুলে দেখেন তার ছেলে প্রতারণার মাধ্যমে পুরো সম্পত্তি হেবা দলিল করে নিয়েছে। বঞ্চিত হয় ৫ মেয়ে ও দুই ছেলে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বি ও ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হলেও ব্যর্থ হয় রজব আলী। গত এপ্রিল মাসের ২ তারিখে সম্পত্তি ফেরত পাবার আসায় ছেলে কদ্দুছ মিয়া ও পুত্রবধু সামছুন্নাহারকে আসামী করে হবিগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন রজব আলী।
রজব আলী জানান, আমার ছেলে ও ছেলের বউ আমার সাথে প্রতারণা করে অন্যান্য ছেলে মেয়েকে বঞ্চিত করে সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে। আমি কোনদিন রেজিস্ট্রি অফিসে যাইনি। আমাকে ও আমার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য পুত্রবধূ সামছুন্নাহার খারাপ আচরণ করে, ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। পুত্রবধূ আমাদেরকে বিল্ডিং থাকতে দেয়না, ঠিকমত খাওয়াও দেয়না।
ছোট ছেলে বাচ্চু মিয়া জানান, বড় ভাই বাবার কাছেই থাকতো। এই সুযোগে সে সব সম্পত্তি দলিল করে আমাদেরকে বঞ্চিত করেছে। এখন আমরা অন্যত্র বসবাস করছি।
এদিকে বাবার দেয়া সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বড় ছেলে কদ্দুছ মিয়া বলেন, বাবা স্বেচ্ছায় আমাকে সব সম্পত্তি হেবা দলিল করে দিয়েছেন। আমি কোন প্রতারণার আশ্রয় নেইনি। তাছাড়া বাবা এখন বাড়িতেই আছেন। বের করে দেয়ার প্রশ্নই তো আসে না। শত হউক তিনি আমার বাবা। বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেব এমন পাষান আমি নই।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ অজয় দেব জানান, বৃদ্ধ রজব আলী এরকম একটি অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসলে আমি উভয়পক্ষকে নিয়ে বসি। কদ্দুছ মিয়াকে বলি তার বাবাকে যেনো ঘর থেকে বিতারিত না করে এবং ৫৭ শতাংশ থেকে ৭শতাংশ জমি বাবাকে ফেরত দেয়। তিনি যেনো বাকি জীবন স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাঁচতে পারে। কিন্তু কদ্দুছ মিয়া তাতে রাজি হয়নি। যেহেতু আদালতে বিষয়টি নিয়ে মামলা চলমান, তাই আদালতের সিদ্ধন্তে মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply