মোঃ রাজিব জোয়ার্দ্দার, পাবনা প্রতিনিধি :
পাবনার সুজানগর থানার ওসি মো. বদরুদ্দোজা ও মালিফা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জুয়েল হোসেনের বিরুদ্ধে নিরীহ এক পরিবারকে মামলার ভয় দেখিয়ে গত আট মাসে ৭০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সাথে দাবিকৃত চাহিদানুয়ী মাসোহারা না দেয়ায় বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে জানা যায়, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামের কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন শাহীন শেখ গেদু। পারিবারিক এক ঝগড়াকে কেন্দ্র করে মালিফা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জুয়েল হোসেন গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে সুজানগর থানায় ওসি মো. বদরুদ্দোজার সামনে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয়।
কৃষক পরিবারটি নিয়মিত ধর্মীয় অনুশাসন পালন করায় এসআই জুয়েল জেএমবি বলে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে প্রতি মাসে টাকা নিতেন। গত ৮মাসে তিনি এই দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে মোট ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু দরিদ্র কৃষক শাহীন শেখ গেদু ডিসেম্বর মাসে টাকা দিতে না পারায় তার নাবালক ২ সন্তান এনামুল শেখ ও ইমরান শেখকে রাতে বাড়ি থেকে আটক করে মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এন্ট্রি করেন সুজানগর থানার ওসি মো. বদরুদ্দোজা। এ ঘটনায় পরিবারটি আতংকে জীবনযাপন করছে।
ভুক্তভোগী শাহীন শেখ গেদু জানান, নওয়াপাড়া গ্রামের মৃত আ. সাত্তার সেখের পুত্র রঞ্জু শেখ ও শেখ মো. আব্বাস উদ্দিন আলহাজ আমাদের দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলো। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে উভয়পক্ষের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আমি ২০২০ সালে বাবা-মা ও পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এলাকায় একটি দোয়া ও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করি। উক্ত অনুষ্ঠানে আমার চাচাত ভাই শেখ মো. আব্বাস উদ্দিন আলহাজকে সভাপতির দায়িত্ব না দেয়ায় সে আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং বিভিন্নভাবে পরিবারের সদস্যকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। আমি তাদের এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে পারিবারিক ঝড়গা-বিবাদ হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল সে আমাদের পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা এজাহার দায়ের করতে যায়।
এজাহারে রঞ্জু শেখ ও শেখ মো. আব্বাস উদ্দিন আলহাজকে সুজানগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার কথা উল্লেখ করা হলেও এই প্রতিবেদক সুজানগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভর্তির নিবন্ধন খাতায় তাদের ভর্তির কোনো তথ্য পায়নি।
সুজানগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মো. আ. মাজেদ জানান, ২৪ এপ্রিল রঞ্জু শেখ ও শেখ মো. আব্বাস উদ্দিন আলহাজ নামে আমাদের সুজানগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেউ ভর্তি হননি।
উপরোক্ত ঘটনার পরে রঞ্জু শেখ ও শেখ মো. আব্বাস উদ্দিন আলহাজ যোগাসোগে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জুয়েল হোসেন ২ পক্ষের ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসার কথা বলে কৃষক শাহীন শেখ গেদুকে ডেকে সুজানগর থানায় ওসি মো. বদরুদ্দোজার সামনে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয় এবং মামলার ভয় দেখিয়ে গত আট মাসে আরও ৫০ হাজার, সর্বমোট ৭০ হাজার টাকা আদায় করেন।
কিন্তু দরিদ্র্য শাহীন শেখ গেদু ডিসেম্বর মাসে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার নাবালক ২ সন্তান এনামুল শেখ ও ইমরান শেখকে বাড়ি থেকে আটক করে মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে ৮ মাস পূর্বের মিথ্যা ও সাজানো মামলা এন্টি করেন সুজানগর থানার ওসি মো. বদরুদ্দোজা।
সুজানগর থানার ওসি মো. বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলা এন্ট্রি না করা এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মামলা এন্ট্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
মালিফা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জুয়েল হোসেন ৭০ হাজার টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করলেও সরেজমিনে এলাকাবাসীর কাছ থেকে গত আটমাসে দরিদ্র শাহীন শেখ গেদুর বাড়িতে নিয়মিত আসার সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ওসি মো. বদরুদ্দোজা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।
এছাড়াও সরেজমিনে মামলাবাজ শেখ মো. আব্বাস উদ্দিন আলহাজ’র এর বিরুদ্ধে চাকুরিরত অবস্থায় টাঙ্গাইলে একটি এনজিও এর টাকা আত্মসাত করে হাজতবাস এবং তার বড় ভাই রঞ্জু শেখের বিরুদ্ধে এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তথ্য পাওয়া যায়।
এই ঘটনায় প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। এই সংবাদটি না করার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে এই অপকর্মের সাথে সংশ্লিষ্টরা তদবির চালান।
ছবি- ওসি মো. বদরুদ্দোজা ও এসআই জুয়েল হোসেন
Leave a Reply