সিরাজুল হক রাজু স্টাফ রিপোর্টার
নোনা পানির হওয়ায় একদিকে যেমন তা দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না, তেমনি খুব একটা চাহিদা না থাকায় বিক্রি করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
আড়তদাররা বলছেন, এসব ইলিশের বেশিরভাগই আগে চোরাই পথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চালান হতো। বরিশালেরই কিছু অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদারদের কাছ থেকে সাগরের ইলিশ সংগ্রহ করে সীমান্তে চালান করত। কিন্তু প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে পাচার করা যাচ্ছে না ইলিশ।
মাত্র ক’দিন আগেও বরিশালে সাগরে ধরা পড়া ইলিশের পাইকারি দর ছিল প্রতি মণ ৩৮ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার তা নেমে আসে ২৮-৩০ হাজারে।
বরিশাল ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, ভরা মৌসুম হলেও প্রায় ১ মাস ধরে দফায় দফায় নিম্নচাপ আর সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরতে যেতে পারেননি জেলেরা। বর্তমানে আবহাওয়া কিছুটা শান্ত হলেও অভ্যন্তরভাগের নদ-নদীতে মিলছে না ইলিশ। মিঠা পানিতে না মিললেও নোনা পানির সাগরে ক’দিন ধরেই ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ।
বরিশালের ইলিশ মোকামে বৃহস্পতিবারও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মণ ইলিশ নিয়ে এসেছেন সাগরের জেলেরা। এর আগের ৩ দিনও একইভাবে সাগরের ইলিশ এসেছে মোকামে। ইলিশের প্রাচুর্যের কারণেই মূলত মণপ্রতি গড়ে প্রায় ৮ হাজার টাকা কমেছে দাম।
খলিলুর রহমান এ কথা বললেও সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য জানান ইলিশ মোকামের আরেক ব্যবসায়ী কামাল হোসেন। তিনি বলেন, স্বাদের পার্থক্যের কারণে সাগরের ইলিশের চাহিদা খুব একটা নেই। সবাই চায় বেশি স্বাদের মিঠা পানির মাছ। ফলে সাগর থেকে আসা এই মাছ নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি আমরা।
আরেকটা সমস্যা হচ্ছে-সাগরের ইলিশ বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। বরফ দিয়ে রাখা হলে কিছুদিন পর এ মাছ খানিকটা লালচে হয়ে যায়। মিঠা পানির ইলিশের ক্ষেত্রে এটা হয় না।
মোকামের ব্যবসায়ী বারেক সিকদার বলেন, এখনও লোকাল ইলিশের দাম প্রতি মণ (কেজি সাইজ) ৪৮-৫০ হাজার টাকা। অথচ সাগরের ইলিশের দাম নেমে এসেছে প্রতি মণ ৩০ হাজার টাকায়।
বরিশাল ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, আগে সারা বছরই ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি হতো বাংলাদেশের ইলিশ। মূলত সাগরের ইলিশই বিদেশে পাঠাত এখানকার রফতানিকারকরা। রফতানি বন্ধ হলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ঠিকই চোরাই পথে ভারতে পাঠাত ইলিশ। এতে সাগরের ইলিশের চাহিদা যেমন ছিল জমজমাট, তেমনি দামও ছিল আকাশছোঁয়া।
বরিশাল ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী সিকদার ফিশ ট্রেডিংয়ের মালিক জহির সিকদার বলেন, বরফ দিয়ে ইলিশ সংরক্ষণ প্রশ্নেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাদন দেয়া ট্রলার মাছ নিয়ে এলে রাখতেই হয় আমাদের।
এই সবকিছু মিলিয়ে একদিকে যেমন হু-হু করে কমছে সাগর থেকে আসা ইলিশের দাম, তেমনি একই হারে ইলিশ আসতে থাকলে লোকসান কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে টেনশনে আছেন সবাই
Leave a Reply