মোঃ আনোয়ার হোসেন ,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,০৩অক্টোবর ২০২০ঃ
শৈলকুপায় ভাই হত্যার মামলা করে বিপাকে পড়েছেন বাদী সহোদর ভাই ও স্বাক্ষীরা। প্রতিপক্ষ ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও মামলার আসামীদের হুমকিতে নিরাপত্তার কারণে ছেলে-মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি ছাড়া ৬টি পরিবার। এমন অভিযোগ করেন নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন ইদু ও মামলার স্বাক্ষীগন।
গত (২০১৪ সালে ২৫ নভেম্বর) শৈলকুপার ১০নং বগুড়া ইউনিয়নের রতœাট গ্রামের মাঠ থেকে বগুড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রতিপক্ষরা পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার ভাই জালাল উদ্দিনকে।এ ঘটনার ২৮ নভেম্বর তিনি (নাসির উদ্দিন) বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ঝিনাইদহ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং-২৪১/১৪ )। মামলার আসামীগন হচ্ছেন,ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার ছেলে রাজিব বিশ্বাস,মনিরুল,আশিক,ইমদাদুল,রউফ,রাকিব ও ফরিদসহ বারজন।
এ মামলায় স্বাক্ষী রাখেন সায়েম শেখ, কাজী গোলাম নবী, কাজী মোহাম্মদ আলী, কাজী বিল্লাল হোসেন, তানিয়া খাতুন ও মোঃ সাহাবুদ্দিনকে। মামলা দায়েরের পর থেকেই ১০নং বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং আসামিরা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন মামলার বাদী নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন ইদু ও স্বাক্ষীদেরকে।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ২৫ নভেম্বর শৈলকুপার রতœাট গ্রামের মাঠ থেকে বগুড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন দুপুরে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন ইদু বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগিরা শুরু করে বাড়ি ঘর ভাংচুর, লুটপাট। হত্যা মামলার বাদি ও স্বাক্ষীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ি ঘর ভাংচুর শুরু করে। মামলা তুলে নিতে শুরু হয় হত্যার হুমকি। ভাই হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করার অপরাধে ছাড়তে হয় বাড়ি। মামলার বাদী ও স্বাক্ষীরা অত্যাচার সইতে না পেরে বাড়ি ফেলে স্বজনদের নিয়ে পালিয়ে যায়। ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তারা বাড়ি ফিরতে পারেনি। স¤প্রতি বাড়িতে ফিরতে চাইলে দেওয়া হচ্ছে হুমকি, মামলা তুলে বাড়ি উঠতে হবে বলেছে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। বাড়িতে জঙ্গল হয়ে গেছে, কোন কোন বাড়িতে এখন গরু চরানো হচ্ছে। বাড়ির বারান্দায় জন্মেছে ঘাষ।
বাদী নাসির উদ্দিন ইদু বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে আজ ৬ বছর বাড়ি ছাড়া আছি। বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। এমনকি আদালতে স্বাক্ষী দিতে গেলেও আসামীরা মারধর করতে যায়। বাড়ি যাওয়া তো দুরের কথা এখন আদালতে যাওয়ার সাহসই পাচ্ছি না। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই বলে আজ আমি বাড়ি যেতে পারছি না । হত্যাকারীদের ফঁসি দাবি করে নিহত জালাল উদ্দিনের ভাই ইদু কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, তিনি ন্যায়বিচার পেতে পুলিশ সুপার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্বাক্ষী কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ার কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে এত বছর বাড়ি ছাড়া। বাড়িতে ফিরতে চাইলে চেয়ারম্যান বলছে, আগে মামলা তুলতে হবে তারপর বাড়িতে ফিরতে হবে। কয়েকদিন আগে বাড়িতে ফিরতে চাইলাম। মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে উঠতে দিবে না বলে আসামীরা হুমকি দিচ্ছে।
অপর স্বাক্ষী কাজী বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রায় ৩০ বিঘা জমি আর বাড়ি পড়ে আছে আমাদের। বাড়িতে যেতে পারছি না। উপরন্তু আমাদের জমিতে চেয়ারম্যান ফুটবল খেলার মাঠ বানিয়েছেন। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি পক্ষের ভয়ে আমরা বাড়ি ছাড়া রয়েছি। কিন্তু তারপরও নজরুল চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী আসামি পক্ষের নির্যাতন থামছে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে স্বাক্ষী সাহাবুদ্দিন বলেন, যাদের ঘর নেই বর্তমান সরকার তাদের ঘর তৈরী করে দিচ্ছে। আর আমাদের ঘর বাড়ি থাকা স্বত্তেও বছরের পর বছর ধওে পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি ছাড়া। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, পুলিশ তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে সে অনুযায়ী বিচার হবে। আমরা বিচার চাওয়ায় আজ বাড়ি ছাড়া। তাই পুলিশ সুপারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বলতে চাই, আমরা বাড়ি ফিরতে চায়। ফিরতে চায় স্বাভাবিক জীবনে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ১০নং বগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যা নিজেরা করে আমাদের নামে মামলা দিয়েছে। মানুষ যখন জানতে পেরেছে তারা নিজেরাই হত্যা করেছে জনরোষের ভয়ে তারা নিজেরাই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমরা কাউকে মারিও নি, তাড়াইওনি এবং বাড়ি ছাড়াও করিনি।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ধরনের হুমকির কোনো বিষয় তার জানা নেই।কেউ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন সে বিষয়েও কোন অভিযোগ দেয় নি।
Leave a Reply