মোঃসাদ্দাম হোসাইন সোহান
বিশেষ প্রতিনিধিঃ-
কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে জানা যায়,কলম্বোতে গত ৯ই ডিসেম্বর ২০ দিন বয়সী এক মুসলিম শিশুকে বাবা-মায়ের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও দাহ করে কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই বিষয়টি গোটা বিশ্বের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয় এবং তোপের মুখে পরে শ্রীলঙ্কা।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষ মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায় আপত্তি জানিয়ে আসছে। গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকার মুসলমানদের ধর্মীয় স্পর্শকাতরতাকে ইচ্ছা করে অবজ্ঞা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মুসলমানদের মৃতদেহ দাহ করায় বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে দেশটিতে।
কলম্বোর যে ক্রিমেটোরিয়াম বা দাহ করার স্থানে শিশুটিকে দাহ করা হয়, সেখানে মুসলিমরা দলে দলে হাজির হয়ে দেয়ালের গেটে সাদা ফিতা ঝুলিয়ে দেয়। সারা শ্রীলঙ্কা জুড়েই বহু মুসলমান তাদের দরজা-জানালায়-দেয়ালে সাদা ফিতা বেঁধে প্রতিবাদ করছে। প্রতিবাদ চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘স্টপফোর্সডক্রিমেশন‘ এই হ্যাশট্যাগে। সরকারের এ ধরণের কাজের বিরুদ্ধে স্লোগান লেখা ব্যানার হাতে নিয়েও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এছাড়াও আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেও প্রবাসী শ্রীলঙ্কান মুসলমানেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাদের সাথে যোগ দেন অন্য দেশের মুসলিম এবং মানবাধিকার কর্মীরা।
শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস মহামারির জন্যে মুসলিমদের দায়ী করে প্রচারণা চালাচ্ছে স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম। আর লঙ্কান সরকারের কর্মকাণ্ডগুলোও হয়ে উঠেছে মুসলিমবিদ্বেষী। মুসলিমদের ধর্মীয় রীতি ও অনুভূতির তোয়াক্কা না করেই করোনায় মৃত সবার দেহ পোড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। খবর আল জাজিরার।
দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষের দেশ যার ১০ শতাংশই মুসলিম। সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায় আগে থেকেই সমস্যায় থাকলেও ২০১৯ সালের ২১ শে এপ্রিলে কলম্বোর ৩ টি চার্চ ও ৩ টি হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা হয়। অখ্যাত একটি মুসলিম জঙ্গী সংগঠন ঐ হামলা করে বলে প্রমানিত হয়। এর পর থেকে শ্রীলংকান মুসলিমদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে এবং দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইসলামভীতি ভর করেছে ।
গত অক্টোবর থেকে শ্রীলঙ্কায় হু হু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই সেখানে অন্তত ৩৮ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন, আর মারা গেছেন ১৮৫ জন।
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এখন কোয়ারেন্টাইন নীতির কথা বলে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন লঙ্কান অ্যাটর্নি জেনারেল দাপ্পুলা ডি লিভেরা।
তবে সরকারের এ নীতি চ্যালেঞ্জ করেছেন স্থানীয় মুসলিমরা। লঙ্কান সুপ্রিম কোর্টে মরদেহ পোড়ানো আটকানোর জন্য আবেদন করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও একাধিক নাগরিক অধিকার সংস্থা।
তবে কোনও কারণ উল্লেখ না করেই সেই আবেদনগুলো খারিজ করে দেয় শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ আদালত।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, করোনায় আক্রান্তদের মরদেহ মাটিচাপা বা দাহ করা যেতে পারে। কিন্তু শ্রীলংকা সরকার, শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়কে আরও কোণঠাসা করতে এই মহামারিকে ব্যবহার করে মুসলিম মরদেহ পোড়াচ্ছেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিবার কোয়ারেন্টাইনে থাকে এবং ওই অবস্থায় মরদেহ শনাক্ত করারও সুযোগ থাকে না। কোনও ময়নাতদন্ত হয় না। এর কারণে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
গতমাসে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) শ্রীলঙ্কাকে মুসলিমদের মরদেহ কবর দিতে পরিবারগুলোকে অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে সেই আহ্বানে শ্রীলঙ্কা সাড়া দেবে তেমন কোনও লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
Leave a Reply