শরিয়তপুর থেকে আকতার হোসেনের প্রতিবেধন:
অনুকুল আবহাওয়া, সরকারি প্রণোদনা ও ভর্তুকিসহ বিভিন্ন সহায়তার কারণে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ করেছেন কৃষক। যেদিকে চোখ যায় বিস্তীর্ণ হলুদের সমারোহ। যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে সরিষা ফুলের হলুদ আভা। ভেদরগঞ্জের চরাঞ্চলে শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন হলদে ফুলের মনমাতানো মৌ-মৌ গন্ধ আর অপরূপ দৃশ্য আকৃষ্ট করে যে কাউকে। বিশেষ করে উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ হয়েছে। এখন সরিষার ফুল ধরার সময়। অপরূপ এ দৃশ্য দেখে মনে হয় কৃষকরা যেন তাদের ক্ষেতে রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে রেখেছে।
এবার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৮শ ৫২ হেক্টর জমি। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামশ্য আর সরকারি সহায়তা পেয়ে এবার লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪শ ২২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ। কিছু দিনের মধ্যে কৃষকের ঘরে উঠবে সরিষা। পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের ফসলি জমিতে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার প্রতি হেক্টর জমিতে মাঘী সরিষা ১.৭৫ মেট্রিক টন এবং বারি সরিষা ১.৮৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত উৎপাদন হয়। মাঘি সরিষা ৬৫-৭০ দিন এবং বারি সরিষার জাত ৮০-১০০ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। ঘন কুয়াশা বা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এবার সরিষার ভালো ফলন হবে। এবার বাজারে সয়াবিনের দাম বৃদ্ধির কারণে সরিষার বাজার দাম ভালো পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে কৃষকেরা। আপাতত দৃষ্টিতে সরিষা চাষের দিকে ঝুকছে কৃষক। শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য প্রচলিত জাতগুলো থেকেও উন্নত জাতের বেশ কিছু প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা সখিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সখিপুর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আশা করা যায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে। এবার ঘন কুয়াশা পরেনি সামনে এ অবস্থা বজায় থাকলে সরিষার সোনালী দানা কৃষকের গোলায় উঠবে।
কাঁচিকাটা ইউনিয়নের কৃষক তারেক আলী মোল্যা জানান, এ বছর যে পরিমাণ সরিষার ফলন হয়েছে, তাতে বিঘা প্রতি ৪-৫ মনের ওপরে ফলন পাওয়া যাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা এবং সরিষার ন্যায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ধান চাষের পাশাপাশি সরিষা সহ অন্যান্য তৈল বীজ জাতীয় ফসল চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় এবার মাঘি ও বিভিন্ন ধরণের বারি জাত মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৪শ ২২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। আমাদের উপজেলার গড় উৎপাদন ১.৮৫ মেট্রিক টন সরিষার ফলন হয়। অনুকুল আবহাওয়া থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীতে এই অঞ্চলের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখি, তিলসহ অন্যান্য তেল বীজ আবাদের জন্য কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।
Leave a Reply