নিরব দুর্ভিক্ষের প্রতিচ্ছবি: আখলাক হুসাই
সময় তখন সকাল সাতটা বেজে পনের মিনিট। শীতের সকাল তাই শহরের রাস্তায় তেমন গাড়ির আনাগোনা নেই। দুই চারটি গাড়ি ভূ-ভূ করে চলে যাচ্ছে। একজন যুবক হাতে একগাদা কাগজ নিয়ে শহরের ফাঁকা রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হনহনিয়ে হেটে চলছেন। বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হবে। মুখে দাড়ি, গায়ে পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি আর পায়ে পরা আছে মধ্যমমানের এক জোড়া সো। দেখেই মনে হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের কোন একজন পরিশ্রমী দায়িত্বশীল। মুখে চিন্তার ছাপের পাশাপাশি মৃদু হাসি সোভা পাচ্ছে। শ্যামলা বর্ণ যুবকের মায়াবী চেহারায় রয়েছে এক অপূর্ব আকর্ষণ। সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বারবার ফিরে তাকাচ্ছেন পিছনের দিকে। হয়তো বা কোন যানবাহন খুঁজছেন! অনেকক্ষণ হাঁটার পর পিছন থেকে একটি রিকশা আসলো। চালক একজন আধা বয়সী ব্যক্তি। যুবক সিগন্যাল দিয়ে থামলেন! ড্রাইভারকে গন্তব্যের কথা জানালেন। ড্রাইভার বললেন; ভাড়া ত্রিশ টাকা হবে। যুবক জিজ্ঞেস করলেন; পাঁচ টাকা কম হবে? প্রতিত্তোরে ড্রাইভার একটা ফিনকি হাসি দিয়ে বললেন; পাঁচ টাকা কোন টাকা হলো? যুবক দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে রিকশায় উঠতে উঠতে বললেন; চাচাজী! আপনার কাছে পাঁচ টাকা হয়তো বা টাকা মনে হচ্ছে না কিন্তু আমার কাছে তা অনেক কিছু! যুবক রিকশায় চড়ে বসেছেন। প্রকৃতির মৃদু বাতাসে এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করছেন। রিকশা হনহনিয়ে চলছে গন্তব্যের দিকে। যুবক পাঁচ টাকার গল্প বলতে শুরু করলেন। বললেন, ইনকামের টাকা দিয়ে কোনমতে পরিবার চলে। এমন অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতায় গত ছ’মাস থেকে হাজার দু’এক টাকার ঘাটতি পড়তে শুরু করেছে। এছাড়া একটা নতুন ব্যয়ের খাত বৃদ্ধি পেয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! আমার আদরের সন্তানটা সদ্য খেতে শিখেছে। তার পিছনে প্রতিদিন ২০/৩০টাকা এক্সট্রা খরচ করতে হয়। এই টাকা গুলো ম্যানেজ করি আমার ব্যক্তিগত নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে কমিয়ে। আমার অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার গাড়ি ভাড়া পাঁচ টাকা। গত তিন মাস থেকে সেই জায়গাটা পায়ে হেঁটে পাঁচ টাকা আয় করি সন্তানের জন্য। আংকেল; এখন বলুন তো! পাঁচ টাকাকে কি টাকা মনে হয়?………
চালক মুখে কিছু না বলে শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা ঝাকালেন। ততক্ষণে গন্তব্যে চলে এসেছেন যুবক। ভাড়া মিটিয়ে পায়চারি করা শুরু করলেন। চালক যুবকের দিকে অপলকে তাকিয়ে রইলেন……
লেখক: কবি ও সাহিত্যিক।
Leave a Reply