মোঃ আনোয়ার হোসেন, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি,
ঝিনাইদহ-যশোর হাইওয়ে ৬ লেনে উন্নীতকরণে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ‘উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজেস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ওঠার কথা রয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ওয়েস্টান ইকনোমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট (উইকেয়ার) প্রোগ্রামের আওতায় ২০২০ সালের ২৭ মে ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংক ও সরকারের মধ্যে নেগোসিয়েশন হয়েছে। এই ঋণের মধ্যে ৩১৮ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে এবং ১৮১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার এলজিইডির সড়ক উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- ওয়েস্টান ইকনোমিক করিডরের ঝিনাইদহ-যশোর অংশের ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক উভয়পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করে এই করিডোরটির সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করা। এছাড়া দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বেনাপোল, ভোমড়া স্থলবন্দর ও মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়ে করিডর, বিমসটেক রোড করিডোর ও সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকনোমিক কো-অপারেশন (সাসেক) রোড করিডরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্য পৃথক লেন এবং ব্যস্ততম স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং স্মার্ট হাইওয়ে নির্মাণের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল (ওএফসি) এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য ইনটেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম স্থাপন করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভোমড়া-সাতক্ষীরা-নাভারণ-যশোর-ঝিনাইদহ-বনপাড়া-হাটিকামরুল অ্যালাইনমেন্টটি ওয়েস্টার্ন ইকনোমিক করিডোরের গুরুত্বপূর্ণ রুট, যার মোট দৈর্ঘ্য ২৬০ কিলোমিটার। ওয়েস্টার্ন ইকনোমিক করিডর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ সহায়তায় ২৬০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ করিডোর উন্নয়ন করা হবে। করিডরটিকে মোট ৪টি অংশে আলাদা করা হয়েছে, যার মধ্যে ভোমড়া-সাতক্ষীরা-নাভারণ ৫৮ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া ৬৬ কিলোমিটার ও কুষ্টিয়া-বনপাড়া-হাটিকুমরুল ৮৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এই চারটি অংশের মধ্যে ভোমড়া-সাতক্ষীরা-নাভারণ ও যশোর-ঝিনাইদহ অংশ উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক এবং ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া ও কুষ্টিয়া-বনপাড়া-হাটিকুমরুল অংশ উন্নয়নে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ সহায়তা দেবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে ঝিনাইদহ-যশোর পর্যন্ত মোট ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কাংশ চার লেনে উন্নীতকরণ ও উভয়পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের লেন নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংক উইকেয়ার ফেজ-১ এর আওতায় ৩১৮ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ঋণ দেওয়ার নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। ওয়েস্টার্ন ইকনোমিক করিডরের মাধ্যমে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বেনাপোল, ভোমড়া স্থলবন্দর ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভূটান-ভারত-নেপালের কার্গো রুট হিসেবে এই করিডোরটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া পদ্মাসেতু নির্মাণ শেষ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭ জেলার জনগণ এই করিডোরটির মাধ্যমে উপকৃত হবে। এ করিডোর ব্যবহার করে পরবর্তী সময়ে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত ও নেপাল এবং বুড়িমারি দিয়ে ভারত ও ভুটানের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সড়ক সংযোগ সহজতর হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় ঝিনাইদহ-যশোর পর্যন্ত ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনে উন্নয়নের জন্য সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ হতে প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ১৫১ দশমিক ৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, এক হাজার ৬৪৭ দশমিক ২৯ মিটার ফ্লাইওভার, ১৯৮ দশমিক ১২ মিটারের চারটি ব্রিজ, ১৯৮ দশমিক ১০ মিটারের ৫৫টি কালর্ভাট, ১২টি পদচারী ওভারব্রিজ, একটি আন্ডারপাস, ১ হাজার ৭৮৭ জনমাস নির্মাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সুপারভিশনের জন্য পরামর্শক সেবা, ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেস এবং অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সিস্টেম ডিজাইনের জন্য পরামর্শক সেবা, প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিট (পিআইইউ) সাপোর্টেও জন্য পরামর্শক সেবা, পুনর্বাসন কাজ বাস্তবায়নের জন্য এনজিও সেবা, ফেইজ-১ এর ডিজাইন রিভিউ এবং ফেইজ-৩ এর ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ডিটেইলড ডিজাইন প্রণয়নের জন্য পরামর্শক সেবা, পরিবেশগত ও সামাজিক ব্যবস্থাপনার জন্য পরামর্শক সেবা এবং অভ্যন্তরীণ অডিটের জন্য পরামর্শক সেবা দেওয়া।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সদস্য শামীমা নার্গীস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইকনোমিক করিডোরের ২৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ঝিনাইদহ-যশোর অংশের ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করা হলে পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে অবশিষ্ট অংশগুলো উন্নয়ন সহজ হবে। এছাড়া দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বেনাপোল, ভোমড়া স্থলবন্দর ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়ে করিডোর, বিমসটেক রোড করিডোর ও সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকনোমিক কো-অপারেশন (সাসেক) রোড করিডোরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।’
সূত্র: সারাবাংলা.নেট অনলাইন
Leave a Reply