মাঈনউদ্দীন মিন্টু নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
জনাব মওদূদ আহমেদ স্যার। আপনাকে কিভাবে সম্ভোধন করবো একটু ইতস্তত করেই কলম ধরেছি। একটি প্রবাদ দিয়েই শুরু করতে চাইঃ শেষ ভালো যার, সব ভালোই তার। মহান আল্লাহ আপনাকে যশ খ্যাতি পদ পদবী, মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, জাতীয় নেতা, বিশ্বপরিচিতি কোনটিরই কমতি নেই। সামান্য ভুলের খেসারত বাংলাদেশের বাঘা বাঘা নেতা তাঁদের জীবন সায়ন্যে আম ছালা দুটিই হারিয়েছন। লক্ষিপুরের সাবেক স্পিকার ও প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ উল্লাহ শেষ জীবনে শুধু এমপি হতে পেরেছিলেন। ৯ বছরের রাজা জেনারেল এরশাদের করুন পরিনতি আপনি সব চাইতে ভালো জানেন। আপনি একজন প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ জাতীয় নেতা, মন্ত্রী, উপপ্রধান মন্ত্রী, সংসদ নেতা, উপরাষ্ট্রপতি সবই হলেন, বাকী প্রেসিডেন্টের পদটাই আপনার বাকী ছিলো। রাজনীতিতে আপনার সমকক্ষ মশিউর রহমান যাদুমিয়া, শাহ আজিজ, এটি বারি, আবদুল আলিম, বি চৌধুরীর মতো জাঁদরেল নেতারা আজ নেই। আল হামদ লিল্লাহ আপনি এখনো রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করেন।
আমি সাধীনতা সংগ্রামের একজন কর্মি। আপনাকে আগরতলার মামলা, যুদ্ধকালীন অবস্থান থেকে সাধীনতার পরের সকল কর্ম কান্ডে আপনাকে জানার সুযোগ হয়েছে। আপনার প্রতিকুল কোন বিষয় অবতারণা আমার জন্য শোভনীয় নয়। তারপরও বর্তমান বাস্তবতায় যতকিঞ্চিৎ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কারন গ্রামীণ প্রবাদ হলোঃ পঁচা শামুকেও পা কাটা যায়। আপনিও হাটি হাটি পা পা করেই আজকের অবস্থানে এসেছেন। আত্ম অহমিকায় কোন উদীয়মান তরুণ নেতাকে আপনি পিপীলিকা বলে তাচ্ছিল্য করেছেন। এতে আপনার মহত্ত্বের দেউলিয়াত্বের প্রকাশ হয়েছে।
কোম্পানিগঞ্জ বাসিকে অনেক দিয়েছেন, আমরাও আপনাদের মতো জাতীয় গুরুজন পেয়ে গর্বিত।
আজকে কোম্পানিগঞ্জ বিএনপির রশি টানাটানি, হামলা মামলা বা মুখোমুখি অবস্থান এই উর্বর ঘাটিকে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে তারচাইতে আপনার ব্যক্তিত্তের জানাজা হয়ে যাবে। আপনাকে দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে ভালো বেসে আসছি। আজকে একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে কিছু লিখতে হচ্ছে।
দেশটা আমাদের কারো জমিদারী নয়। গনতন্ত্রের সংবিধানের আপনিও একজন আইন প্রনেতা। ১৯৭৯ সালে আপনার সিদ্ধেশরীর বাসায় যখন শুনলেন জনাব আব্দুল মালেক উকিল আপনার আসনে ইলেকশান করবেন। আপনি অনেকের সামনে উকিল সাহেবকে শায়েস্তা করার চরম হুমকি দিলেন। আপনি ১৯৮০ সালের শেষ দিকে ৭৬ জন এমপি নিয়ে বিএনপি ভাংগার লড়াই চালিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি ছাত্তারের সাথে আপোষ করে ফিরে আসেন। আপনাকে সেনা ট্রাইবুনাল ” ক” অঞ্চলে সাজা দেওয়ার অল্প কয়েকদিন পর আপনি মুক্তিলাভ করে জাতীয় পার্টি গঠনে ভুমিকা রাখেন এবং সকল পদ পদবী ভোগ করেন। এই ১১ টি বছর বিএনপিকে তথা বেগম খালেদা জিয়াকে রাজপথে রেখে আপনি ক্ষমতার মালিক হলেন। হোটেল পূরবানী থেকে খালেদাকে কিডন্যাপ করা হয়, আপনি তখন এরশাদের দোসর ছিলেন। আপনার অনুপস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতিতে আপোষহীন নেত্রী হাল ধরলেও কোম্পানিগঞ্জ ছিলো অভিভাবকহীন। সেই মহা দুঃসময়ে বিএনপির কান্ডারী ছিলেন জনাব এডভোকেট জাকির হোসেন। হাল ধরেছেন প্রেসিডেন্ট জিয়ারই বেইছমেট ও কোম্পানিগঞ্জের কৃতি সন্তান কর্নেল এনাম সাহেব। এগিয়ে আসলেন জাসদ নেতা খিজির হায়াত, নুরুল ইসলাম মিয়া, মালেক ইন্জিনিয়ার, আবদুল হাই সেলিম, জিয়াউল হক জিয়া। লায়ন শেখ মহি উদ্দিনের বিষয়টি এখনো কেউ ভুলেনি।
আজকে সেই সকল দুর্দিনের মাঝিমাল্লারা হারিয়ে গেলো, আপনি বিএনপিতে ইউ টার্ন করে কাউকে কি আপন করে নিয়েছেন? এইসব নেতাদের ক্ষোভ দুঃখ তুশের অনলে চাপা পড়ে আছে। আশাকরি আপনার হিসেবের ডাইরী খুললে এই নিবেদিত মানুষগুলোকে খুজে পাবেন। তারা অন্যকোন দল করেনি বিএনপিকেই লালন করে।
গত সপ্তাহে শিল্পপতি ফখরুলের বাড়ীতে হামলা মামলার বিষয়ে আপনি নিরব। আপনার পরামর্শ উতসাহে ফখরুল ইসলাম রাজনীতিতে পদার্পণ করে। আপনার পক্ষেই কোম্পানিগঞ্জের জনশক্তিকে আগলে রেখেছে। ফখরুল ইসলামের জনপ্রিয়তাকে আপনার ভয় পাওয়ার কথা নয়। আপনি মওদুদ আহমেদ এর বিকল্প মওদুদ আহমেদ। তাই বলে কি কারো রাজনৈতিক সাধীনতা থাকবেনা? বয়সের কারনে রাজনৈতিক আপনার সমকক্ষ অনেকে মাঠে নেই। আপনিও থাকবেন না বলেই আপনাকে আরও সহনশীল হতে হবে। আপনাকে মাও ভাসানী, একে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দীদের মতো ক্ষমতা নয় দেশকে ভালোবাসতে হবে। আমরা চাই আপনি অমর হয়ে থাকুন। কোম্পানিগঞ্জকে সংগঠিত করুন নিজের উত্তরাধিকার সৃষ্টি করুন। অবহেলিত একটি ইদুর সিকারীর জালে আটকা পড়া বিশাল হাতিকে উদ্ধার করেছিলো। কাউকে পিপিলিকা বলে ছোট করার সুফল বয়ে আনেনা। আপনার মন্ত্রীত্ত চলে যাওয়ার পর ১৯৮০ সালে মাকসুদা গার্ল স্কুলে আপনি বেহেস্ত আর দোজখের কিচ্ছা দিয়ে বুঝিয়েছিলেন বাংগালীরা কেউ কারো কল্যান চায়না। আপনি ঐ সকল হিংসুটের মাঝে শামিল হওয়া আমরাও চাইনা।
আপনার সফলতা সুসাস্থ ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সূএঃ হাফিজ ছিদ্দিকি।
Leave a Reply