রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২০, খুলনা ->>
এইচ এম সাগর (হিরামন) বিশেষ প্রতিনিধি ->>
মহানগরীতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া সাতক্ষীরার যুবক হাবিবুর রহমান ওরফে সবুজ (২৬) হত্যা মামলার আসামীদের উপস্থিতি ও অভিযোগ আমল বিষয়ে শুনানির জন্য আজ ৫ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে। মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ শহীদুল ইসলামের আদালতে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ সালের ৬ মার্চ রাতে ঘাতকেরা সবুজকে হত্যার পর লাশ খন্ড-বিখন্ড করেছিল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রসহ ১৪শ’৩৬ পৃষ্ঠার কেস ডকেট আদালতে জমা দেন। এরপর মূখ্য মহানগর হাকিমের আদালত থেকে গত ২৪ মার্চ মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়ে আসে। আসামিরা হচ্ছে, একেএম মুজতবা চৌধুরী মামুন ওরফে মোস্তফা (৩৫), আসাদুজ্জামান আসাদ ওরফে আরিফ (৩৫), অনুপম মহলদার (৪২) মোঃ খলিলুর রহমান ওরফে খলিল (৪৫) এবং আব্দুল হালিম গাজী (৩২)। এদের মধ্যে পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত মোস্তফাকে পুলিশ আজও গ্রেফতার করতে পারেনি। আরেক আসামি আসাদুজ্জামান গত ২০ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে এক বছরের জন্য অন্তবর্তীকালীন জামিন পায়। জামিনে মুক্তির পর সে পালিয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত দিনে সে হাজির না হওয়ায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে আদালতের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
মামলায় গ্রেফতার হওয়া চার আসামির মধ্যে খলিল বাদে অন্য তিন জন আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছি। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে খলিল খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও আদালতে জবানবন্দি দেয় নি। এই চার জনের বিরুদ্ধে হত্যা, দস্যুতা, চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকটি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আসামী হালিম এবং খলিলকে নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে পুলিশ গ্রেফতার করে বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইন্সপেক্টর শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানান, আসামী মোস্তফা মামুনের স্ত্রী এবং বোনের সাথে নিহত সবুজ অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। এর প্রতিশোধ নিতে সে তাকে খুলনার আদালত পাড়ায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করে। যা বাস্তবায়নে আসামি আসাদকে সে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল। তবে, খুনের পর ওই টাকার অংশ বুঝে পাওয়ার আগেই অন্য তিন জন গ্রেফতার হয়। তদন্ত কর্মকর্তা হত্যাকা-ে ব্যবহার হওয়া ধাঁরালো অস্ত্র, নিহতের ব্যাবহৃত মোটর সাইকেল, হেলমেটসহ সহ ৩৮ প্রকারের আলামত আদালতে জমা দিয়েছেন। তদন্তকালে তিনি ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছেন।
পুলিশ জানায়, ফারাজিপাড়া লেন এলাকার হাসনাত মঞ্জিলে আসাদের ভাড়া করা কক্ষের বিছানায় সবুজকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর মরদেহ বাথরুমে নিয়ে ১৩ টুকরো করা হয়। এর আগে তাকে মিস্টির সাথে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। অভিযুক্ত খলিল নগরীর ময়লা পোতা মোড় এলাকার সাতক্ষিরা ঘোষ ডেয়ারি থেকে আটটি চমচম ও এক পোয়া সন্দেশ কিনে এনেছিল। ওই মিস্টির দোকানের কর্মচারীরা চেহারা দেখে তাকে সনাক্ত করে। আততায়ীরা লাশের খ-গুলো সাতটি প্যাকেটে পুরে শহরের পৃথক দু’টি সড়কে ও ড্রেনে ফেলে দেয়া হয়। প্যাকেট সংকটের কারণে লাশের কয়েকটি টুকরা ওই কক্ষেই থেকে যায়। রয়ে যায় রক্ত মাখা দা ও ছোরা। নিহতের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা ৮ মার্চ রাতে খুলনা সদর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। হত্যাকা-ের আগে ঘাতকেরা নিহত সবুজের ব্যাংক এ্যাকাউন্টের ডেভিট কার্ড হাতিয়ে নেয়। জেনে নেয় পিন কোড। এরপর আসামি আসাদ ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে দু’লাখ টাকা তুলে নেয়। ওই ব্যাংকের এক্সপার্টগণ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ হওয়া টাকা উত্তোলনের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন। যা সিডি আকারে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
Leave a Reply