মোঃসাদ্দাম হোসাইন সোহান
বিশেষ প্রতিনিধিঃ-
ফরিদপুর শহরের পৌর এলাকার ভাটি লক্ষীপুর ফকির পাড়া কুমার নদের পাড়ের বড় একটি অংশ হঠাৎ করেই ধসে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে এ এলাকার কিছু অংশ দেবে যায়।
রবিবার সন্ধ্যার দিকে বিকট শব্দে নদের পাড়ের একটি অংশ ধসে গেলে সেখানে থাকা ১০টি বসত বাড়ি ও বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার রাস্তা বিলিন হয়। পাকা রাস্তার বেশকিছু অংশ ধসে যাওয়ায় চুনাঘাটা-কবি জসীমউদদীন সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেড়িবাঁধের একটি অংশ ধসে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, ফরিদপুর কুমার নদ খননের জন্য নদ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়। নদের মাটি নদের তীরে ফেলার কথা থাকলেও তা না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় সেই মাটি বিক্রি করে দেয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিভিন্ন ইট ভাটায়। ফলে নদী খননের পর নদীর পাড়ের বিভিন্ন স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
গত মাসে অতিবৃষ্টির ফলে নদীপাড়ের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়। নভেম্বর মাসের শুরুতে লক্ষীপুর ফকির পারায় বিভিন্ন স্থানে বড় আকারের কয়েকটি ফাটল দেখা দেয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করলে তাদের জানানো হয় বিষয়টি দেখবে পৌর কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েকদিন ধরে লক্ষীপুর এলাকার নদীর পাড়ের পাকা রাস্তাসহ বড় একটি অংশ দেবে যায়। স্থানীয়রা লাল পতাকা টানিয়ে সেখান দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সাথে ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি। গত কয়েকদিন ধরে ফাটলের অংশটি কিছুটা করে দেবে যেতে থাকে।
রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই ধসে যায় একটি অংশ। ধসের কারণে ভাটি লক্ষীপুর এলাকার কুমার নদীর পাড়ের মীর আলমাস, রহিম শেখ, ফিরোজ খান, করিম মোল্যা, মনসুর শেখ, মোহাম্মদ আলী, জাকির হোসেন ও করিম শেখের বসত বাড়ি বিলিন হয়ে যায়। একই সাথে প্রায় ৩০০ মিটার পাকা সড়ক ধসে গেছে। হঠাৎ করে বসত বাড়ি ও রাস্তা ধসে যাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই তাদের ঘর-বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিতে পারেননি। বর্তমানে ভাঙ্গন এলাকায় যারা রয়েছেন তারা তাদের বাড়ি ঘরের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। বসত-বাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মীর আলমাস, রহিম শেখ, করিম মোল্যাসহ
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, অপরিকল্পিত ভাবে কুমার নদী খনন করা এবং নদীর মাটি রাতের আধারে স্থানীয় ইটের ভাটায় বিক্রি করে দেবার কারণেই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হলেও তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশকিছু দিন ধরেই কুমার নদীর বিভিন্ন অংশে সড়ক ও নদীর পাড়ে ফাটলের সৃষ্টি হয়। শহরের অম্বিকাপুর পল্লী কবি জসীমউদদীনের বাড়ির কাছ থেকে লক্ষীপুর চুনাঘাটা ব্রীজ পর্যন্ত পাকা সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের উপর নির্মিত। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, বসত-বাড়ি ধসে যাওয়ার খবর পেলে সেখানে এক কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা পরিবার গুলোকে অন্যত্র সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply