শাজাহানপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর গ্রামে এনজিও গুলোর কিস্তির টাকার চাপে মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায় বিচার পেতে প্রধান মন্ত্রী বরাবর স্বারক লিপি দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী হাছিনা খাতুন। গতকাল সোমবার শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে এই স্বারক লিপি জমা দেয়া হয়। নির্বাহী কর্মকর্তার পেশকার মুজাহিদ সেটি রিসিভ করেন।
স্বারক লিপি সূত্রে জানাযায়, ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য হাছিনার স্বামী ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি বেলাল হোসেন(২৮) ৬টি এনজিও থেকে ঋন গ্রহন করেন। করোনা দূর্যোগ কালীন সময়ে বেলালের স্বাভাবিক আয় একদম কমে যায়। তার পরেও তিনি সাধ্যমত কিস্তির টাকা শোধ করে আসছিলেন। সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে এনজিও গুলো কিস্তির টাকা আদায়ে তার উপরে চাপ সৃস্টি করে আত্বহত্যার দিকে প্ররোচিত করেন। এক পর্যায়ে ১৫সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে বেলাল পরিবারের সবার অগোচরে প্রথমে বিষ পান করেন এবং পরে লোহা কাটা শান মেশিন দিয়ে নিজেই নিজের গলা কেটে ফেলেন। লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় বিকেল সারে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় হাসিনা বাদী হয়ে ওই ৬এনজিও এর ম্যানেজার এবং মাঠ কর্মী সহ মোট ১১জনকে আসামী করে গত বৃহস্পতিবার জেলা বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। গত শনিবার মামলা দায়েরের খবর পেয়ে শনিবার বেলা ৩ টার দিকে সোসিও ইকোনোমিক ব্যাকিং এসোসিয়েশন(সেবা) মাঝিড়া শাখার চার কর্মকর্তা তার বাড়িতে আসেন এবং এনজিও’র কোটি কোটি টাকা আছে তাই মামলা করে লাভ হবে না বলে হুমকি দিয়ে যান। এছাড়া অন্যান্য এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মীরা গ্রামে কিস্তি আদায় করতে এসে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে মামলার তদন্ত এবং ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে তিনি শঙ্কায় রয়েছেন।
এনজিও ব্যানারে ক্ষুদ্র ঋন কার্যক্রম চালিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান মোটা তাজা হলেও সাধারণ জনগন রক্ত শূণ্য হয়ে পড়ছে। ইংরেজ আমলের নীল চাষ আর বর্তমান সময়ে এনজিও গুলোর ক্ষুদ্র ঋন কার্যক্রম এক সুতোয় গাঁথা। নীল চাষের চেয়েও এই ঋন কার্যক্রম আরো ভয়াবহ। এনজিও থেকে ঋন নিয়ে কেউ ১টাকা লাভ করতে পেরেছেন এরকম একটা ব্যবসা খুঁজে পাওয়া যাবেনা বলে স্বারক লিপিতে দাবী করেছেন হাছিনা খাতুন। টাকার প্রয়োজনে ঋন নিয়ে মানুষ কিস্তির ফাঁদে পড়ে। এরপর আর বের হতে পারেন না। অবশেষে এনজিও গুলোর কিস্তির টাকার চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্বহত্যা করে এমন ঘটনা বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় প্রায়ই ঘটছে। তবে এসব কোন আত্বহত্যার ঘটনায় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়না বলে স্বারক লিপিতে তুলে ধরা হয়েছে।
স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী এনজিও গুলো যেন মামলার তদন্ত এবং বিচার ব্যবস্থা প্রভাবিত করতে না পারে তারজন্য প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন হাছিনা। সেই সাথে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা থেকে ৬এনজিও অফিস গুলো বন্ধের জন্যও দাবী করেছেন।
সোসিও ইকোনোমিক ব্যাকিং এসোসিয়েশন (সেবা) মাঝিড়া শাখার ম্যানেজার হেলাল উদ্দিন জানান, তাকে কোন হুমকি দেয়া হয়নি। যা খুশি করুক। কোন সমস্যা নাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা পারভীন জানান, স্মারকলিপি এখনো হাতে পাননি। হাতে পেলে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply