(আবু ইউসুফ)নিজস্ব নিউজ রুম ঢাকা বাংলাদেশ
বিয়ে বাড়িতে চলছে ধুমধাম আনন্দ উল্লাস জাঁকজমকভাবে সাজানো হয়েছে গেট আর প্যান্ডেল বরযাত্রীসহ প্রায় (৪০০) লোকের খাবারও প্রস্তুত কিন্তু যার জন্য এত আয়োজন সে বরই এলো না নববধূ সেজে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না প্রিয়ার ছদ্মনাম মুহূর্তেই সব আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়
রোববার শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে পাচুখার কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে প্রিয়া একই গ্রামের দরিদ্র ব্যবসায়ীর মেয়ে এক বছর আগে মোবাইল অ্যাপস ইমোর মাধ্যমে সোহাগ নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রিয়ার পরিচয় হয় এরপর বন্ধুত্ব থেকে প্রেম সোহাগ জানান তিনি রাজশাহী শহরের বাসিন্দা বাবা বেঁচে নেই একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায় চাকরি করছেন।
একপর্যায়ে প্রিয়া কে বিয়ের প্রস্তাব দেন সোহাগ বিষয়টি নিজ পরিবারকে জানান প্রিয়া পরে প্রেমের সম্পর্ক মেনে নেন প্রিয়ার বাবা মা এরপর বিয়ের ব্যাপারে চাচা পরিচয়ে একজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রিয়ার বাবা কে আলাপ করিয়ে দেন সোহাগ দুজনের আলোচনার পর জানুয়ারির (৩) তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করা হয় দিন তারিখ ঠিক হওয়ায় দাওয়াত দেয়া হয় আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের।
এরই মধ্যে সোহাগ ওই তরুণীকে জানান তার নাকি আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না তাই বিয়ের খরচের জন্য দুদিন আগে ওই তরুণীর পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা ধার চান সোহাগ টাকা না পেলে তার বিয়ে করা সম্ভব হবে না।
এ কথা শুনে মেয়ের বিয়ের জন্য নিজের দুই কড়া জমি বিক্রি করেছিলেন প্রিয়ার বাবা এছাড়া এক লাখ টাকা ঋণও নেন বিয়ের এক সপ্তাহ আগে প্রিয়ার বাবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সোহাগকে (৭০) হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন বাকি টাকা দিয়ে বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করেন বিয়ের আগের রাত পর্যন্ত প্রিয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ছিল সোহাগের বিয়ের দিন সকাল থেকে বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে এবং আত্মীয় স্বজনরা আসতে থাকেন চলে খাওয়া দাওয়া।
বরও যাত্রী কতদূর তা জানার জন্য প্রিয়ার পরিবার সোহাগের মোবাইল ফোনে কল করেন কিন্তু তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় এরপর একাধিক নম্বর দিয়ে বারবার কল করেও কোনো কাজ হয়নি বরের মোবাইল ফোন বন্ধ জানতে পেয়ে বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন লোকজনের মধ্যে সন্দেহ বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে বিয়ে বাড়ির আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে থাকে থেমে যেতে থাকে বিয়ের আয়োজন ও কোলাহল দিশেহারা হয়ে পড়ে প্রিয়ার পরিবার।
দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে কিন্তু নেই বরের দেখা গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন তারা কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরবেশে আসেননি সোহাগ এ ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন প্রিয়া।
প্রিয়া বলেন ইমু গ্রুপের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর সোহাগের সঙ্গে সম্পর্ক হয় সে আমাদের বলেছে ওর বাড়ি রাজশাহী শহরে এবং সে নাকি নড়িয়া থানায় পুলিশে চাকরি করে নড়িয়াতে আমি তার সঙ্গে দুবার দেখাও করেছি সে আমাকে বিয়ে করবে বলে আমাদের কাছে বিয়ের খরচের জন্য এক লাখ টাকা চেয়েছে আমরা তার কথায় বিশ্বাস করে (৭০) হাজার টাকা পাঠিয়েছি এবং বিয়ের আয়োজন করেছি কিন্তু সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে আমি বিচার চাই।
এ সময় ওই তরুণী তার মোবাইলে সোহাগ নামের ওই যুবকের একটি ছবি দেখান ছবিতে দেখা যায় কোনো এক কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ডের ইউনিফর্ম পরে আছেন সোহাগ ইউনিফর্মে লেখা আছে সোহাগ ও সিকিউরিটি (০১৯৫০৯৯২১২৮) (০১৩১৫৩৩৯৬৮৩) (০১৩১৪৯৮৪৯০৯) এসব নম্বরে সোহাগের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান প্রিয়া ও তার পরিবার।
প্রিয়ার বাবা বলেন আমি গরিব মানুষ লেখাপড়া জানি না সহায় সম্পত্তি তেমন কিছুই নেই দিন এনে দিন খেতে হয় চার ছেলে মেয়ের মধ্যে আমার এ মেয়েই বড় দুই কড়া জমি ছিল তাও মেয়ের বিয়ের জন্য বিক্রি করে দিয়েছি টাকা পয়সা খুইয়ে শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারলাম না আমাদের মানসম্মান সব গেছে। এখন আমার মেয়ের কী হবে জাজিরার ইউএনও মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন বিয়ের কাবিন বা লিখিত কোনো চুক্তিপত্র না হওয়া পর্যন্ত আইনি কিছুই করার নেই। সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারলে ভালো।
এ ঘটনায় এখনো তরুণীর পরিবার জাজিরা থানায় মামলা বা কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছে জাজিরা থানা পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে।
Leave a Reply